রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের বর্জ্য ছিনতাই: তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য
পাবনার ঈশ্বরদীতে নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের (আরএনপিপি) বর্জ্য বহনকারী ৫টি ট্রাক লুট হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বাংলা পাওয়ার কোম্পানির স্বত্বাধিকারী মো. রানা ফকির দেড় লাখ টাকার ক্ষতির দাবি করেছেন। ঘটনাটি মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ঘটেছে বলে জানা গেছে।
মালিকের অভিযোগ
রানা ফকির জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে রূপপুর প্রকল্পের তালিকাভুক্ত ঠিকাদার হিসেবে বর্জ্য অপসারণের কাজ করে আসছেন। ঘটনার দিন প্রকল্প এলাকা থেকে ৫টি ট্রাকে কাঠের টুকরোসহ অন্যান্য বর্জ্য বোঝাই করে ভেড়ামারা ডাম্পিং এলাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। এ সময় ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তানভির হাসান সুমন ওরফে আমেরিকান সুমনের নেতৃত্বে একটি দল ট্রাকগুলো আটক করে। তারা ট্রাকগুলো প্রকল্প সংলগ্ন কেন্দ্রীয় গোরস্থানের পাশে নিয়ে গিয়ে মালামাল আনলোড করে নিয়ে যায়।
রানা ফকির আরও বলেন, “আমি দীর্ঘদিন ধরে রূপপুর প্রকল্পের বর্জ্য অপসারণের সঙ্গে যুক্ত। এমন ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি। এই লুটপাটে আমার প্রায় দেড় লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় থানায় মৌখিকভাবে বিষয়টি জানিয়েছি।” তিনি দাবি করেন, এই ঘটনায় প্রকল্প এলাকায় তার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
অভিযুক্তের বক্তব্য
অন্যদিকে অভিযুক্ত তানভির হাসান সুমন এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “বাংলা পাওয়ার কোম্পানির স্বত্বাধিকারী রানা ফকির উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন। আমি এই ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানতাম না। পরে রানা ফকিরই আমাকে ঘটনাটি জানিয়েছেন। এরপর আমি বিষয়টি জানার চেষ্টা করেছি। এখন আমার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হচ্ছে।”
পুলিশের প্রতিক্রিয়া
ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শহীদুল ইসলাম জানান, “এ ধরনের ঘটনার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয় প্রতিক্রিয়া
রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প দেশের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো। সেখানে এমন একটি ঘটনা ঘটায় স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা দ্রুত তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করার দাবি জানিয়েছেন। স্থানীয়রা মনে করছেন, এমন ঘটনা প্রকল্পের সুনাম ক্ষুণ্ণ করতে পারে এবং ভবিষ্যতে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে।
প্রকল্পের গুরুত্ব ও নিরাপত্তা
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এই প্রকল্প থেকে দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে বড় ধরনের অবদান রাখার আশা করা হচ্ছে। তবে এই ধরনের ছিনতাইয়ের ঘটনা প্রকল্পের নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনায় বড় প্রশ্ন তুলেছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
উন্নয়নের পথে বাধা?
এ ধরনের ঘটনা শুধু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং পুরো প্রকল্পের কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এলাকাবাসী এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আশা করছেন, বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত সমাধান করা হবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বর্জ্য ছিনতাইয়ের অভিযোগ নিঃসন্দেহে দুশ্চিন্তার কারণ। স্থানীয় প্রশাসন ও প্রকল্প কর্তৃপক্ষ যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে এ ধরনের ঘটনা প্রকল্পের সুষ্ঠু পরিচালনায় আরও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন